জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ৯২ শতাংশ বাড়ি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত সংস্থা (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, গাজার মোট চার লাখ ১৬ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে এবং দুই লাখ ৭৬ হাজার বাড়ি আংশিক বা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
ওসিএইচএ আরও জানায়, এই মুহূর্তে গাজায় ১৮ লাখেরও বেশি মানুষের আশ্রয় এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জরুরি প্রয়োজন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার আনুমানিক ৯০ শতাংশ মানুষ ইতোমধ্যেই ঘরছাড়া। তাদের মধ্যে অনেককেই একাধিকবার জোরপূর্বক বাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।
গাজায় দীর্ঘ ১৫ মাস পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর, চরম মানবিক সংকট
দীর্ঘ ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর গাজায় রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতিকে কেন্দ্র করে অনেক ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে শুরু করেছেন। অনেকে এই যুদ্ধবিরতিতে স্বস্তি প্রকাশ করলেও, বহু মানুষ এখনও ধ্বংসযজ্ঞের সামনে দাঁড়িয়ে শোকবিহ্বল। তাদের সাজানো সংসার এখন শুধুই ধ্বংসস্তুপ।
আরও পড়ুন👉 ইরানে মহানবীকে কটূক্তির দায়ে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর কঠিন শাস্তি
যুদ্ধের পটভূমি ও ফলাফল
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলের অভিমুখে হামাসের যোদ্ধারা হামলা চালায়। তারা ইসরায়েলি ভূখণ্ডে প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়। ওই হামলায় ইসরায়েলে অন্তত ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে হামাস।
ইসরায়েলি বাহিনীও এর প্রতিক্রিয়ায় একই দিনে গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে। এই সংঘাত ১৫ মাস ধরে চলতে থাকে। এই যুদ্ধে গাজায় অন্তত ৪৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং এক লাখের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। পাশাপাশি লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
বাড়ি ফেরার আনন্দ ও বিষাদ
যুদ্ধবিরতির পর অনেক ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িতে ফিরে গেছেন। তবে তাদের অধিকাংশই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ফিরে এসেছেন। একদিকে যুদ্ধের অবসানে তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন, অন্যদিকে তাদের হারানো বসতবাড়ি আর জীবনের স্থায়িত্বহীনতা তাদের হৃদয়ে বেদনা জাগিয়েছে।
মানবিক সংকট ও সহায়তার প্রয়োজন
জাতিসংঘের রিপোর্টে গাজার জনগণের চরম মানবিক সংকটের চিত্র ফুটে উঠেছে। আশ্রয়হীন লাখ লাখ মানুষ এখন সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এখন জরুরি।
গাজার এই দীর্ঘ সংঘাতের অবসান হলেও সেখানে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে অনেক সময় লাগবে। এই যুদ্ধবিরতি যেন স্থায়ী শান্তির পথে একটি পদক্ষেপ হয়, এটাই সকলের প্রত্যাশা।