অনলাইনে শূন্য আয়কর বা জিরো রিটার্ন জমা দেওয়ার নতুন পদ্ধতি ২০২৫

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
ছবিঃ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

অনলাইনে শূন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য প্রধান শর্ত হলো—কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ধারীর মোট আয় করমুক্ত সীমার মধ্যে থাকা। টিআইএনধারী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক, যদিও তাদের কোনো আয় না থাকে। এই প্রক্রিয়া সরকারের কাছে নাগরিকদের আর্থিক হিসাব সুসংগঠিতভাবে উপস্থাপন করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। যাদের বার্ষিক আয় করমুক্ত সীমার মধ্যে, তারা সহজেই শূন্য রিটার্ন জমা দিতে পারেন।

শূন্য রিটার্ন কী?

শূন্য রিটার্ন হলো এমন একটি আয়কর রিটার্ন, যেখানে আয় করমুক্ত সীমার মধ্যে থাকে এবং কোনো কর প্রদানের প্রয়োজন হয় না। এই রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় আয়, ব্যয়, সম্পদ ও ঋণের সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে হয়।

করমুক্ত আয়ের সীমা

টিআইএনধারী যেসব নাগরিকের বার্ষিক আয় নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে, তারা শূন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সুযোগ পাবেন।

নিম্নে করমুক্ত আয়ের সীমাগুলো তুলে ধরা হলো—

  • নারী এবং ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব ব্যক্তিদের জন্য: ৪ লাখ টাকা।
  • প্রতিবন্ধী বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের জন্য: ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
  • যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য: ৫ লাখ টাকা।
  • অন্যান্য ব্যক্তিদের জন্য: ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

অনলাইনে শূন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের ধাপ

১. প্রথম ধাপ:
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ই-রিটার্ন পোর্টালে (https://etaxnbr.gov.bd/#/auth/sign-in) লগইন করুন। প্রয়োজনীয় নথিপত্র যেমন আয়, ব্যয়, সম্পদ ও ঋণের বিবরণ প্রস্তুত রাখুন।

২. রিটার্ন ফর্ম পূরণ:
দুই ধরনের ফর্ম ব্যবহার করা যায়—

  • এক পৃষ্ঠার রিটার্ন: সংক্ষেপে আয়, ব্যয় এবং সম্পদের তথ্য উল্লেখ করতে হয়। করযোগ্য আয় না থাকলে কর শূন্য দেখিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া যায়।
  • বহু পৃষ্ঠার রিটার্ন: এখানে আরও বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়। করযোগ্য আয় না থাকলে “নো” অপশন নির্বাচন করুন, যাতে কর সম্পর্কিত অংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়।

৩. সম্পত্তি ও ঋণ সংক্রান্ত তথ্য:
যাদের সম্পত্তি বা ঋণ রয়েছে, তাদের আইটি১০বি ফর্ম পূরণ করতে হবে। আয়ের রেয়াত এবং ব্যয়ের তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করুন।

৪. তথ্য যাচাই এবং জমা:
রিটার্ন ফর্মের সব তথ্য যাচাই করে “সাবমিট রিটার্ন” বাটনে ক্লিক করুন।

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা সংক্রান্ত শূন্য রিটার্ন দাখিলের ধাপ

সঞ্চয়পত্রের মুনাফা সংক্রান্ত শূন্য আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়—

১. করযোগ্য আয় নির্ধারণ:
“ইনকাম ফ্রম ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসেটস” অপশনে টিক চিহ্ন দিন।

২. রেয়াতের তথ্য:
“অ্যাডিশনাল ইনফরমেশন” পেজে গিয়ে “ইয়েস” নির্বাচন করে আইটি১০বি ফর্ম সক্রিয় রাখুন। এরপর রেয়াত ও ব্যয়ের তথ্য পূরণ করুন।

৩. রেয়াত হিসাব:
“কর রেয়াত” পেজে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগের তথ্য দিন। সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত রেয়াত গ্রহণযোগ্য।

৪. উৎসে কর:
“পেমেন্ট অব ট্যাক্স অ্যাট সোর্স” ঘরে উৎসে কৃত করের তথ্য দিন।

৫. সম্পত্তি ও দায় বিবরণী:
সম্পত্তি, দায় এবং তাদের উৎস সংক্রান্ত তথ্য আইটি১০বি ফর্মের মাধ্যমে প্রদান করুন।

৬. চূড়ান্ত যাচাই এবং জমা:
সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করে “সাবমিট রিটার্ন” বাটনে ক্লিক করুন।

সতর্কতা:

  • রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় সকল তথ্য সঠিক এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
  • কর শূন্য দেখানো হলেও আয় এবং ব্যয়ের তথ্য স্বচ্ছভাবে উপস্থাপন করা বাধ্যতামূলক।
  • অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের প্রতিটি ধাপ ভালোভাবে যাচাই করে এগোন।

উপসংহার:

শূন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল একটি সহজ ও সময় সাশ্রয়ী পদ্ধতি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ঘরে বসেই এটি সম্পন্ন করা যায়। করমুক্ত সীমার মধ্যে থাকা নাগরিকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। সঠিকভাবে রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করে নাগরিকরা দেশের কর ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন।

তথ্যঃ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *