
দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে কালকাজি আসন থেকে জয়ী হওয়া আতিশির বিজয় উল্লাসকে ঘিরে বিতর্ক ছড়িয়েছে। আপ নেতা তথা রাজ্যসভার সাংসদ স্বাতী মালিওয়াল তাঁকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “এ কেমন নির্লজ্জ উদযাপন?” শনিবার দিল্লির বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী আতিশিকে নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন স্বাতী মালিওয়াল। আপের ভরাডুবির পরেও আতিশিকে নাচতে দেখে বিস্মিত তিনি। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ শেয়ার করা এক পোস্টে মালিওয়াল লেখেন, “দল পরাজিত, শীর্ষ নেতারা হেরে গেছেন, অথচ আতিশি মারলেনা এমনভাবে উল্লাস করছেন!”
কালকাজি আসন থেকে টানা দ্বিতীয়বার জয়ী হয়েছেন আতিশি। বিজেপি প্রার্থী এবং সাবেক সাংসদ রমেশ বিধুরিকে ৩,৫২১ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন তিনি। আতিশি পান ৫২,১৫৪ ভোট, বিধুরি পান ৪৮,৬৩৩ ভোট, আর কংগ্রেসের আলকা লাম্বা মাত্র ৪,৩৯২ ভোটে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
আপের ভরাডুবি, বিজেপির জয়জয়কার
দিল্লি বিধানসভায় ৭০টি আসনের মধ্যে আপের আসন সংখ্যা কমে ২২-এ নেমে এসেছে, যেখানে ২০২০ সালে তারা পেয়েছিল ৬২টি আসন। অন্যদিকে, প্রায় তিন দশকের অপেক্ষার পর দিল্লির ক্ষমতায় ফিরেছে বিজেপি, এবারের নির্বাচনে তারা ৪৮টি আসনে জয়ী হয়েছে। কংগ্রেস অবশ্য টানা তৃতীয়বারের মতো একটি আসনও জিততে ব্যর্থ হয়েছে।
কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে স্বাতী মালিওয়ালের তোপ
স্বাতী মালিওয়াল আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও কটাক্ষ করেছেন। এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “যদি কেউ অতিরিক্ত অহংকারী হয়ে ওঠে এবং জনসেবার বদলে স্বার্থপর হয়ে যায়, তাহলে জনগণই তাকে শিক্ষা দেয়। কেজরিওয়ালের সঙ্গেও তাই হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আপে এসেছিলাম দিল্লিকে বদলানোর স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি, কারণ আমাদের নেতৃত্ব অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। মিথ্যা বলে সবকিছু সামলানো যাবে, এই বিশ্বাসেই তাঁরা চলেন।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের মে মাসে স্বাতী মালিওয়াল অভিযোগ করেছিলেন যে, কেজরিওয়ালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বিবভ কুমার তাকে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে আলোচনার জন্য সেখানে গেলে তাকে “নির্দয়ভাবে প্রহার” করা হয় এবং সেই সময় কেজরিওয়াল বাড়িতেই ছিলেন।
নির্বাচনের পর আপের ভবিষ্যৎ কী?
দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির (আপ) ভরাডুবির পর প্রশ্ন উঠেছে, দলটির ভবিষ্যৎ কোন পথে এগোবে। একসময় আপের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন স্বাতী মালিওয়াল, কিন্তু এখন তিনি দল ও অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ শানাচ্ছেন।
আরও পড়ুনঃ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অবনতি
নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট যে, দিল্লির রাজনীতিতে আপের একচ্ছত্র আধিপত্য এখন আর নেই। কেজরিওয়ালের দলের বড় বড় নেতারা পরাজিত হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছেন তিনি নিজেও। এছাড়া মনীশ সিসোদিয়া, সৌরভ ভারদ্বাজ, সত্যেন্দ্র জৈনের মতো হেভিওয়েট নেতারাও হেরে গেছেন। অন্যদিকে, বিজেপি রাজধানীতে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
আতিশির উদযাপন: কটাক্ষের কেন্দ্রবিন্দু
কালকাজি আসন থেকে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর আতিশি তার সমর্থকদের সঙ্গে উদযাপনে মেতে ওঠেন। কিন্তু আপের সামগ্রিক হারের প্রেক্ষাপটে তার এই নাচ ও উচ্ছ্বাস সমালোচনার ঝড় তোলে। বিশেষত, স্বাতী মালিওয়াল এটিকে ‘নির্লজ্জ’ আচরণ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তবে আতিশির সমর্থকরা বলছেন, দল হারলেও তিনি তার ব্যক্তিগত বিজয়ের আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন মাত্র। তাঁদের মতে, আতিশি একা লড়াই করে জয় ছিনিয়ে এনেছেন, তাই তার উদযাপন অস্বাভাবিক কিছু নয়।
কেজরিওয়ালের নীরবতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভরাডুবির পর অরবিন্দ কেজরিওয়াল এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আপের জন্য এটি বড় ধাক্কা। বিশেষত, কেজরিওয়াল ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ এবং তদন্ত দলটির ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, আপ কি নিজেদের পুনর্গঠন করে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরতে পারবে, নাকি দিল্লির রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে তাদের প্রভাব কমে যাবে?
দিল্লির রাজনীতিতে একসময় বিপ্লব ঘটানো আম আদমি পার্টি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। আতিশির বিজয় উদযাপন এবং স্বাতী মালিওয়ালের তীব্র আক্রমণ, দুইয়ের মধ্যেই দলটির অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন স্পষ্ট। এখন দেখার বিষয়, আপ কীভাবে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে, আর কেজরিওয়ালের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়।