প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে আসছে বড় পরিবর্তন

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে আসছে বড় পরিবর্তন
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে আসছে বড় পরিবর্তন

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রত্যাশীদের জন্য আশার আলো। আসন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে থাকছে না নারী কিংবা পোষ্য কোটা—নিয়োগ হবে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, নতুন শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা চূড়ান্ত হলেই আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রকাশিত হতে পারে এই বহু প্রতীক্ষিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি।

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, এবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে মোট শূন্য পদের সংখ্যা হতে পারে প্রায় ১৫ থেকে ১৭ হাজার।

এর মধ্যে বর্তমানে ৮ হাজার ৪৩টি সহকারী শিক্ষক পদের শূন্যতা রয়েছে, যা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১০ থেকে ১২ হাজারে। এছাড়া, সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের জন্য আরও ৫ হাজার ১৬৬টি নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

নতুন নিয়োগ বিধিমালায় বড় পরিবর্তন

২০১৯ সালের পুরনো বিধিমালায় যেখানে ৬০ শতাংশ নারী, ২০ শতাংশ পোষ্য এবং ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা বিদ্যমান ছিল।

২০২৫ সালের নতুন বিধিমালায় এই কোটাগুলোর বিলুপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। এবার নিয়োগ হবে ৯৩ শতাংশ মেধা ও ৭ শতাংশ সংরক্ষিত কোটার ভিত্তিতে। সংরক্ষিত ৭ শতাংশ কোটায় থাকবে—

কোটা ক্যাটাগরিশতকরা হার
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান৫%
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী১%
প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক১%

বাকি ৯৩ শতাংশ পদে নিয়োগ হবে শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতে

কোটাবিহীন নিয়োগের সরকারি ব্যাখ্যা

একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “নতুন বিধিমালায় আমরা কোটার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করেছি। আদালতের রায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও বিদ্যমান বাস্তবতার আলোকে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সহকারী শিক্ষক পদটি যেহেতু ১৩তম গ্রেডে পড়ে, সেহেতু এখানে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ কোটা রাখার সুযোগ রয়েছে ।


আরও পড়ুন : বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের রাজস্ব খাতভুক্ত শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি

এই প্রক্রিয়া অনুযায়ী, এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০২৫। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং অনুমোদনের পর এটি অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় এবং সরকারি কর্ম কমিশনের মতামতের জন্য প্রেরণ করা হবে। প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পরপরই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

নতুন বিষয়ের জন্য যোগ্যতা নির্ধারণ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন করে যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানায়, এই বিষয়ে প্রার্থীদের নির্দিষ্ট ডিগ্রি থাকতে হবে এবং নিয়োগ হবে ক্লাস্টার ভিত্তিতে।

প্রতিটি ক্লাস্টারে একজন করে সংগীত এবং একজন শারীরিক শিক্ষাবিষয়ক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।

একটি ক্লাস্টারে ২০ থেকে ২৫টি বিদ্যালয় থাকবে। সারা দেশে মোট ক্লাস্টার সংখ্যা ২,৫৮৩। ফলে মোট নিয়োগ হবে—

বিষয়পদের সংখ্যা
সংগীত শিক্ষক২,৫৮৩ জন
শারীরিক শিক্ষক২,৫৮৩ জন
মোট,১৬৬ জন

এই নিয়োগের মাধ্যমে শিশুদের সৃজনশীলতা ও শারীরিক সুস্থতার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে।

পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করে নতুন নিয়োগ

এদিকে, প্রায় ৩০ হাজার সহকারী শিক্ষককে পদোন্নতি দিয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। এই পদোন্নতির ফলে শূন্য হওয়া পদগুলোতেও নতুন করে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে আরও বাড়বে বিজ্ঞপ্তিতে অন্তর্ভুক্ত পদের সংখ্যা। এ প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা বলেন, “আবেদনের সময় প্রার্থীরা নিজ নিজ যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী পদ নির্বাচন করতে পারবেন।”

নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা প্রাথমিকে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেব। কোনো ধরনের পোষ্য কোটা থাকবে না।” তাঁর এই ঘোষণাই নতুন নিয়োগ নীতিমালার মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

নিয়োগপ্রত্যাশীদের জন্য বার্তা

নতুন বিধিমালা অনুযায়ী, বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারীরা পাবে অগ্রাধিকার। অর্থাৎ, যাঁরা বিজ্ঞানে স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তাঁদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা থাকবে। তবে এই অগ্রাধিকার শুধু ২০ শতাংশ প্রার্থীর জন্য প্রযোজ্য হবে।

এবারের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি হতে যাচ্ছে সময়োপযোগী, স্বচ্ছ এবং সর্বোপরি মেধাভিত্তিক। দীর্ঘদিনের কোটানীতির সমালোচনার পর এই পরিবর্তন শিক্ষাক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রার্থীদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা, কারণ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলে প্রতিযোগিতা হবে অনেক বেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরপরই অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে এবং পরীক্ষা ও অন্যান্য ধাপগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *