
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন আসছে। আজ শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। তিনি দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান ও সাবেক অধিনায়ক।
এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে কয়েকটি কারণ। বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে পরিচালকদের অনাস্থা এসেছে। পাশাপাশি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) সিদ্ধান্তও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
নেতৃত্বে পরিবর্তনের পটভূমি
বিসিবির ৯ পরিচালকের মধ্যে ৮ জনই ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়েছেন। ফলে, তারা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি চিঠি জমা দেন। এরপর, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) তার কাউন্সিলর মনোনয়ন বাতিল করে দেয়। এর মাধ্যমে, কার্যত তিনি সভাপতির পদ থেকে সরে যান।
তবে, এই শূন্যতা পূরণে এনএসসি নতুন কাউন্সিলর হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে মনোনয়ন দেয়। অবশেষে, বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ জরুরি সভায় সেই মনোনয়ন অনুমোদন করে।
আজকের বোর্ড সভা
আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় বিসিবির জরুরি বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভায় আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে, যা অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে ।([Bangla Tribune][2])

আমিনুল ইসলাম বুলবুল: বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান থেকে বিসিবি সভাপতি পর্যন্ত এক অসাধারণ যাত্রা
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম — আমিনুল ইসলাম বুলবুল। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক, দেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রশাসনে সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও রেখে গেছেন অনন্য অবদান। ২০২৫ সালের মে মাসে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করলেন।
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
আমিনুল ইসলাম বুলবুলের জন্ম ১৯৬৮ সালের ২ জুন, ঢাকায়। শৈশব থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তার গভীর অনুরাগ ছিল। স্কুল ও কলেজ জীবনেই ক্রিকেটে নিজের প্রতিভার পরিচয় দিতে শুরু করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পরই তিনি পুরোপুরি ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মনোনিবেশ করেন।
আরও পড়ুনঃ রেকর্ড মূল্যে মোস্তাফিজ দিল্লি ক্যাপিটালসে, আইপিএল স্থগিত ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায়
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার
বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলে আমিনুল ইসলামের অভিষেক ঘটে ১৯৮৮ সালে। তবে ইতিহাস গড়ে দেন ২০০০ সালে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট ম্যাচে, যেখানে ভারতের বিপক্ষে ১৪৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হিসেবে নাম লেখান ইতিহাসের পাতায়।
🔹 আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কিছু উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত:
- প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান – ভারতের বিপক্ষে ২০০০ সালে।
- জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সময়।
- ওয়ানডে ও টেস্ট মিলিয়ে বাংলাদেশ দলের জন্য দীর্ঘদিন অবদান রেখেছেন একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে।
প্রশাসনিক ও আন্তর্জাতিক ভূমিকা
খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করার পর আমিনুল ইসলাম ক্রিকেট প্রশাসনে সক্রিয় হন। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) ডেভেলপমেন্ট অফিসার (এশিয়া) হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন। তার দায়িত্বে ছিল এশিয়ার উদীয়মান ক্রিকেট দলগুলোর দক্ষতা উন্নয়ন, টুর্নামেন্ট আয়োজন এবং গ্লোবাল ক্রিকেট স্ট্র্যাটেজিতে অংশ নেওয়া।
তিনি মালদ্বীপ, ভুটান, নেপাল, আফগানিস্তানসহ অনেক দেশকে ক্রিকেট মানচিত্রে উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন।
বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ
২০২৫ সালের মে মাসে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (NSC) মনোনয়নে আন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসেবে আমিনুল ইসলাম বুলবুল দায়িত্ব নেন। তাকে দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ প্রশাসনিক কাঠামো নির্মাণে একজন দক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে দেখা হচ্ছে।
দায়িত্বকালীন মূল লক্ষ্য:
- বিসিবি নির্বাচন আয়োজন (২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে)
- বোর্ডের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নিরসন
- ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি
- তরুণ ক্রিকেটারদের উন্নয়নে কার্যকর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
সম্মাননা ও স্বীকৃতি
- ২০০০ সালের ঐতিহাসিক টেস্ট ইনিংসের জন্য ক্রিকেট বিশ্লেষক ও সমর্থকদের প্রশংসা লাভ করেন।
- আইসিসি’র হয়ে ক্রিকেট ডেভেলপমেন্টে দীর্ঘদিন অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান।
- বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য একজন রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত।
ব্যক্তিজীবন ও অন্যান্য তথ্য
- তিনি একজন অত্যন্ত শিক্ষিত ও মার্জিত ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত।
- ক্রিকেট ছাড়াও তিনি সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
- বর্তমানে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঢাকা ও মালয়েশিয়া দুই জায়গাতেই সময় কাটান।
আমিনুল ইসলাম বুলবুল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা নাম, যিনি প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান থেকে আইসিসির ডেভেলপমেন্ট অফিসার এবং ২০২৫ সালের বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পর্যন্ত দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। তার দক্ষ নেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রশাসনকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে সহায়ক হবে।
আমিনুল ইসলাম বুলবুলের প্রতিক্রিয়া
নতুন দায়িত্ব প্রসঙ্গে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, “আমাকে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল, আমি তাতে রাজি হয়েছি। এখন কেবল প্রক্রিয়া অনুসরণ করার বিষয়। আপাতত আমার মনোযোগ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনে। এরপর আমাকে কোনও কাজ দেওয়া হবে কি না, আমি আইসিসিতে ফিরে যাবো কি না, ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু বলতে পারি না। তবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা আমার নেই। দীর্ঘমেয়াদে এই ভূমিকায় থাকার ইচ্ছাও নেই” ।([Bangla Tribune][2])
ফারুক আহমেদের অবস্থান
ফারুক আহমেদ পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অনড়। তিনি জানিয়েছেন, “আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পদত্যাগ করব না। আমাকে বলা হয়েছে, সরকার নাকি আমাকে আর বিসিবি সভাপতি হিসেবে রাখতে চাইছে না। কিন্তু কেন রাখতে চাইছে না, সেটার কোনো কারণ তারা আমাকে বলেনি। বিনা কারণে তো আমি পদত্যাগ করতে পারি না” ।([Prothomalo][3], [Prothomalo][4])
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি আইসিসির সভাপতি জয় শাহসহ অন্তত ৫-৭ জন পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং বিষয়টি অবগত করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, আইসিসি দ্রুত তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবে ।([Bangla Tribune][2])
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিসিবির নতুন নেতৃত্বের অধীনে আগামী অক্টোবর মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে নতুন বোর্ড গঠিত হবে পূর্ণ মেয়াদের জন্য। এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে বিসিবি পরিচালিত হবে।
- নতুন সভাপতি: আমিনুল ইসলাম বুলবুল (অন্তর্বর্তীকালীন)
- পূর্ববর্তী সভাপতি: ফারুক আহমেদ
- পরিবর্তনের কারণ: পরিচালকদের অনাস্থা ও এনএসসির সিদ্ধান্ত
- বোর্ড সভা: আজ বিকেল সাড়ে ৪টায়
- নির্বাচন: অক্টোবর ২০২৫([Independent Television][5])