মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রথম সন্তান তারেক রহমান ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তারেক রহমান তার শিক্ষাজীবনের সূচনা করেন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে। সেখান থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি ব্যবসায়িক জগতে প্রবেশ করেন। শুরুতে বস্ত্রশিল্পে বিনিয়োগ করে দ্রুত সাফল্য লাভ করেন এবং পরে নৌ-যোগাযোগ খাতেও সফলভাবে বিনিয়োগ পরিচালনা করেন।
রাজনীতিতে পদার্পণ
তারেক রহমানের রাজনীতিতে পদার্পণ হয় তার পিতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বগুড়া শাখার সদস্য হিসেবে। আনুষ্ঠানিকভাবে দলে যোগদানের আগে থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার মায়ের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তার মায়ের সঙ্গে প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি নিজস্ব পরিকল্পনায় সারা দেশে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
২০০২ সালে দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারেক রহমান বিএনপির জেষ্ঠ্য যুগ্ম মহাসচিব নিযুক্ত হন। এরপর তিনি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। এসব সভায় তিনি দলের গঠনতন্ত্র, উদ্দেশ্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
দলের সংগঠক হিসেবে তারেক রহমান তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় তার দলীয় ভিত্তি মজবুত করে। তারুণ্যের প্রতি তার বিশেষ দৃষ্টি এবং জিয়াউর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নের আহ্বান কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়। কারাগারে থাকার সময় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে তার অবস্থা সংকটজনক হয়ে পড়ে।
২০০৮ সালে জামিন পাওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান তারেক রহমান। বর্তমানে তিনি সেখানেই বসবাস করছেন এবং চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগগুলোর কোনোটি এখনও প্রমাণিত হয়নি।
২০০৯ সালে বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমানকে জেষ্ঠ্য ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়। ওই কাউন্সিলে তার একটি ধারণকৃত বক্তব্য প্রচারিত হয়, যেখানে তিনি তার শারীরিক নির্যাতনের অভিজ্ঞতা এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিষয়গুলো তুলে ধরেন।
তারেক রহমান শুধু রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য নন, বরং বিএনপির সংগঠক এবং নেতৃত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। নানা বিতর্ক ও সংকট মোকাবিলা করেও তিনি নিজেকে দলের একজন কার্যকর নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।