সম্প্রতি ২০২৫ সালের শুরুতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিটি সিগারেট মানুষের গড় আয়ু থেকে প্রায় ২০ মিনিট কমিয়ে দেয়। এই গবেষণাটি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল)-এর বিজ্ঞানীরা পরিচালনা করেছেন, যা পূর্ববর্তী ধারণার চেয়েও সিগারেটের ক্ষতি বেশি হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
সিগারেটের প্রভাব এবং জীবন হ্রাস
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ২০টি সিগারেটের একটি প্যাকেট ধূমপান করলে গড়ে ৭ ঘণ্টা জীবন হ্রাস পায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কেউ ১ জানুয়ারি ধূমপান বন্ধ করেন, তাহলে মাত্র ৮ দিনের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ দিনের আয়ু বাঁচানো সম্ভব। আর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধূমপান থেকে বিরত থাকলে, আয়ু প্রায় এক মাস পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
ধূমপানের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব
দীর্ঘমেয়াদি ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে আয়ু হ্রাসের চিত্র আরও ভয়াবহ। গবেষণায় জানা গেছে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে ধূমপান চালিয়ে যান, তারা গড়ে প্রায় ১০ বছর আয়ু হারান। ধূমপান শুধুমাত্র আয়ু কমায় না, এটি বার্ধক্যজনিত অসুস্থতাও দ্রুত ডেকে আনে।
গবেষক ড. সারাহ জ্যাকসন বলেন, “ধূমপান শুধু জীবন ছোট করে না, এটি শরীরে আগাম বার্ধক্যের লক্ষণও তৈরি করে।” যুক্তরাজ্যে ধূমপান প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার মৃত্যুর কারণ। ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশের জন্য ধূমপান দায়ী। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি ধূমপায়ীদের দুই-তৃতীয়াংশের মৃত্যুর মূল কারণ ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত।
গবেষণার ভিত্তি
এই গবেষণাটি ‘ব্রিটিশ ডক্টরস স্টাডি’ (১৯৫১) এবং ‘মিলিয়ন উইমেন স্টাডি’ (১৯৯৬)-এর তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোতে দেখা গিয়েছিল, একটি সিগারেট গড়ে ১১ মিনিট জীবন হ্রাস করে। তবে নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি ১৭ মিনিট এবং নারীদের ক্ষেত্রে ২২ মিনিট পর্যন্ত কমতে পারে।
ধূমপান বন্ধের উপকারিতা
গবেষকরা বলছেন, ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে আয়ু বাড়ানোর পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান উন্নত করা সম্ভব। ধূমপান ত্যাগের জন্য বয়স কখনো বাধা নয়। যেকোনো সময় এই ক্ষতিকর অভ্যাস ত্যাগ করলেই শরীরে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়।
ড. সারাহ জ্যাকসন বলেন, “অনেকে মনে করেন জীবনের শেষের কয়েকটি বছর হারানো তেমন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ধূমপান জীবনের শেষ সময়ের রোগ-ব্যাধিগুলোকে আরও তাড়াতাড়ি নিয়ে আসে।”
গবেষকদের পরামর্শ
গবেষকরা ধূমপায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধূমপান বন্ধ করুন এবং সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের দিকে মনোযোগ দিন।”
সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে এই গবেষণাটি ধূমপানবিরোধী সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি ধূমপায়ীদের জীবন রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। সিগারেট ছাড়ার মাধ্যমে দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।