‘ময়নাতদন্ত’ শব্দটি শুনলেই অনেকের মনে ময়না পাখির ছবি ভেসে ওঠে। তবে মৃতদেহের ব্যবচ্ছেদ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ময়না পাখির কী সম্পর্ক থাকতে পারে, তা নিয়ে আমরা সচরাচর ভাবি না। বিষয়টি আরও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ‘ময়নাতদন্ত’ শব্দটির উৎপত্তি আসলে পাখির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। আসুন, খতিয়ে দেখি এই শব্দের প্রকৃত উৎস ও অর্থ।
‘ময়নাতদন্ত’ শব্দটি গঠিত হয়েছে দুটি অংশ থেকে—‘ময়না’ এবং ‘তদন্ত’। এখানে ‘তদন্ত’ শব্দের অর্থ হলো সত্য উদ্ঘাটনের জন্য অনুসন্ধান বা পরীক্ষা। আর ‘ময়না’ শব্দটির রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ, যা এর উৎসের ওপর নির্ভর করে।
১. বাংলা অর্থ: বাংলা ভাষায় ‘ময়না’ শব্দটি কালো পালকের শালিকজাতীয় এক ধরনের পাখিকে নির্দেশ করে।
২. সংস্কৃত অর্থ: সংস্কৃতে ‘ময়না’ শব্দটি অর্থ করে খল প্রকৃতির নারী বা ডাকিনিকে। এটি লোকগাথায় রাজা মানিকচন্দ্রের জাদুবিদ্যায় পারদর্শী স্ত্রীর নাম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়েছে।
৩. আরবি অর্থ: আরবি ভাষায় ‘ময়না’ শব্দটি এসেছে ‘মুআইনা’ থেকে, যার অর্থ হলো প্রত্যক্ষ পরিদর্শন বা গভীর অনুসন্ধান।
বাংলায় প্রবেশের পর আরবি ‘মুআইনা’ শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে ‘ময়না’ রূপ ধারণ করলেও, এর মূল অর্থ—অনুসন্ধান—অক্ষুণ্ণ থেকেছে। সময়ের সঙ্গে এই অর্থ আরও প্রসারিত হয়েছে।
‘ময়নাতদন্ত’ শব্দে ব্যবহৃত ‘ময়না’ আসলে বাংলা বা সংস্কৃত নয়, এটি আরবি ভাষা থেকে আগত। আরবি ‘মুআইনা’ (পর্যবেক্ষণ) এবং সংস্কৃত ‘তদন্ত’ (অনুসন্ধান) শব্দের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে ‘ময়নাতদন্ত’, যার অর্থ মৃতদেহের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা ব্যবচ্ছেদ। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অস্বাভাবিক বা আকস্মিক মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করা হয়।
ইংরেজিতে ‘ময়নাতদন্ত’ শব্দটির প্রতিশব্দ হলো ‘পোস্ট-মর্টেম’ বা ‘অটপসি’, যা মৃতদেহের বিচারিক ও বৈজ্ঞানিক তদন্ত বোঝায়।
অতএব, দেশি ময়না পাখির সঙ্গে ‘ময়নাতদন্ত’ শব্দের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি আরবি ও সংস্কৃত ভাষার মিলিত প্রয়োগের মাধ্যমে গঠিত একটি শব্দ, যা অনুসন্ধান এবং পরীক্ষার ধারণাকে প্রকাশ করে।