মাইক্রোপ্লাস্টিক হলো ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা, যা মূলত পোশাক, প্যাকেজিং এবং অন্যান্য প্লাস্টিক পণ্যের মাধ্যমে পরিবেশে মিশে যায় এবং পরে সামুদ্রিক প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করে।
গবেষণার প্রেক্ষাপট এবং প্রক্রিয়া
এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে পোর্টল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির অ্যাপ্লাইড কোস্টাল ইকোলজি ল্যাবে। অধ্যাপক এলিস গ্র্যানেক এবং তাঁর দল ওরেগনের ফিনফিশ ও শেলফিশে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের মাত্রা নির্ধারণে কাজ করেছেন। গবেষণার নেতৃত্ব দেন সামার ট্রেলার, যিনি ২০২২ সালে পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। মারিলিন ডানকান নামের একজন গবেষকও এতে সহায়তা করেন।
গবেষণার ফলাফল
গবেষক দল ওরেগনের ছয়টি সামুদ্রিক প্রজাতির খাওয়ার উপযোগী অংশে মাইক্রোপ্লাস্টিক পরীক্ষা করেছেন। এদের মধ্যে ছিল:
- ব্ল্যাক রকফিশ
- লিঙ্গকড
- চিনুক স্যামন
- প্যাসিফিক হেরিং
- প্যাসিফিক ল্যাম্প্রে
- পিঙ্ক শ্রিম্প
পিঙ্ক শ্রিম্পে সবচেয়ে বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এই প্রজাতি সমুদ্রের উপরের স্তর থেকে খাবার সংগ্রহ করে, যা দূষণের ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে চিনুক স্যামন ও ব্ল্যাক রকফিশে তুলনামূলকভাবে কম মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
রান্না ও প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রভাব
গবেষণায় দেখা গেছে, বাজার থেকে মাছ বা চিংড়ি সংগ্রহের পর প্রক্রিয়াজাত করার পরও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণের মাত্রা অপরিবর্তিত থাকে। রান্নার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিলেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পুরোপুরি দূর হয় না।
মানবদেহের ওপর প্রভাব
গবেষণার চমকপ্রদ দিক হলো, মাইক্রোপ্লাস্টিক শুধু সামুদ্রিক প্রাণীর অন্ত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি মাংসপেশীতেও প্রবেশ করে। এর ফলে মানুষ যখন সামুদ্রিক খাবার গ্রহণ করে, তখন এই প্লাস্টিক কণাগুলো সরাসরি দেহে প্রবেশ করে।
গবেষক সুসান ব্র্যান্ডারের মতে, “এটি শুধু সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য নয়, মানুষের জন্যও বড় উদ্বেগের বিষয়।”
মাইক্রোপ্লাস্টিকের সর্বব্যাপী উপস্থিতি
এমনকি সামুদ্রিক খাবার এড়িয়েও মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। বোতলজাত পানি, মধু, সবজি, মাংস এবং ভেজিটেরিয়ান খাবারেও এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
সমাধানের উদ্যোগ
গবেষক দল বর্তমানে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ কমানোর প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কাজ করছে।
- বিশেষ ফিল্টার: সামুদ্রিক খাবার থেকে মাইক্রোপ্লাস্টিক আলাদা করার জন্য ফিল্টার তৈরির পরীক্ষা চলছে।
- পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি: সড়কপথের পানি নিষ্কাশনে মাইক্রোপ্লাস্টিক ধরার জন্য বিশেষ ফিল্টার স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
গবেষণার মূল বার্তা হলো, পরিবেশে ছড়ানো মাইক্রোপ্লাস্টিক শেষ পর্যন্ত আমাদের খাদ্যচক্রে ফিরে আসছে। এটি শুধু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নয়, পরিবেশের জন্যও বড় হুমকি। তাই ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।