গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি: নতুন পরিচয়

গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তনের ঘোষণা
নতুন নাম ‘ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বাংলাদেশ’ হতে যাচ্ছে গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির

গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন: ‘ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বাংলাদেশ’
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত দেশের প্রথম প্রযুক্তিভিত্তিক বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, যার পূর্বনাম ছিল ‘গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’, এখন নতুন এক পরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সুপারিশ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করে রাখা হচ্ছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বাংলাদেশ’। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের এই প্রস্তাব ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। যদি অনুমোদন পাওয়া যায়, তাহলে দ্রুতই গেজেট আকারে নতুন নামটি প্রকাশিত হবে।

গাজীপুরের প্রযুক্তিভিত্তিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা

বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগের সূচনা প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (UGC) পক্ষ থেকে হয়। এরপর, কমিশন থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে চারটি বিকল্প নাম প্রস্তাব করা হয়। এই প্রেক্ষিতে, প্রস্তাবিত নামগুলোর মধ্য থেকে পর্যালোচনা ও সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বাংলাদেশ’ নামটি চূড়ান্ত করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুপারিশ করে।

এ বিষয়ে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, “নতুন নামের প্রস্তাব বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিবেচনায় রয়েছে। অনুমোদন পেলে, প্রজ্ঞাপন জারি করে নামটি কার্যকর করা হবে।”

গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সি: শিক্ষার্থী আন্দোলন ও নাম পরিবর্তনের ইতিহাস


আগের নামকরণ এবং শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা হয় ২০১৬ সালেপ্রথমদিকে, এটি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত ছিল। তবে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সরকার একটি অন্তর্বর্তী সিদ্ধান্তে এর নাম পরিবর্তন করে ‘গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ রাখে। ফলস্বরূপ, নতুন নামটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষের সৃষ্টি করে।

এর পর, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও প্রযুক্তিনির্ভর পরিচয়ের স্বার্থে ‘বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ নাম দাবি করে আন্দোলনে নামেন। তারা একে একে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, ক্লাস বর্জন, রেল অবরোধ এবং ‘শাটডাউন’সহ নানা কর্মসূচি পালন করেন। পরবর্তীতে, আন্দোলনের এক পর্যায়ে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ইউজিসি কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশনেও বসেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও আন্দোলন: গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তনের দাবী

গত ২১ মে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন চলাকালে ইউজিসির পাবলিক ইউনিভার্সিটি বিভাগের সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান ও প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় নাম পরিবর্তনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এরপর থেকেই নাম পরিবর্তনের প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা এই পরিবর্তনের জন্য অনেক কিছু সহ্য করেছি। আমাদের দাবি ছিল একটা সম্মানজনক ও আধুনিক নাম। সরকার সেই দাবি শুনেছে, এতে আমরা আশাবাদী।”
আরও পড়ুনঃ সরকারি পলিটেকনিক ভর্তি পরীক্ষা ২০২৫: নতুন নিয়মে ভর্তি হবে এমসিকিউ ও ফলাফলের ভিত্তিতে

‘ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বাংলাদেশ’: নামটির তাৎপর্য

নতুন নামটি শুধু পরিবর্তিত নয়, বরং ভবিষ্যত প্রযুক্তির দিগন্তে যাত্রা করার এক প্রতীক। ‘ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি’ শব্দগুচ্ছ বোঝায় গবেষণাভিত্তিক, উদ্ভাবনী ও আন্তর্জাতিকমানের প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিশ্রুতি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করে, এই নামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির প্রযুক্তিনির্ভর অগ্রযাত্রা আরও স্পষ্ট ও শক্তিশালী হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও গবেষক জানান, “নামটি আমাদের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গির সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।”

আন্দোলনের ধাপসমূহ: এক নজরে

কর্মসূচির ধরনসময়কালউল্লেখযোগ্য ঘটনা
স্মারকলিপি প্রদানফেব্রুয়ারি ২০২৫শিক্ষার্থীরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিতে স্মারকলিপি দেয়
মানববন্ধনমার্চ ২০২৫শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ও ঢাকায় মানববন্ধন করে
রেলপথ অবরোধএপ্রিল ২০২৫কালিয়াকৈর স্টেশনে রেল অবরোধ করে প্রতিবাদ জানায়
আমরণ অনশনমে ২০২৫ইউজিসি কার্যালয়ের সামনে অনশন শুরু
আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত২১ মে ২০২৫ইউজিসি ও শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সভা

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া: নতুন নামের সামাজিক প্রভাব

নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বিশেষত, কালিয়াকৈরের স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তার নাম শুনে অনেকেই অবহেলা করত। তবে নতুন নামের মাধ্যমে আমরা গর্ববোধ করতে পারব।”

অন্যদিকে, একজন ছাত্রী বলেন, “আমরা চাই ছিলাম একটি গ্লোবাল লেভেলে রিকগনাইজড নাম। কারণ ‘ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি’ শব্দটা সেই আন্তর্জাতিকতা বহন করে।”

প্রযুক্তিনির্ভর উচ্চশিক্ষায় গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নতুন লক্ষ্য

নতুন নামের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের একটি রোডম্যাপও তৈরি করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে, পরবর্তী ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম উন্নয়ন, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং স্মার্ট ক্যাম্পাস তৈরির উপর বিশেষভাবে জোর দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (অধ্যাপক ড.) এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, “নাম পরিবর্তন শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়; বরং, এটি আমাদের ভবিষ্যতের ভিত্তি। সুতরাং, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার একটি প্রধান হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।”

স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে গাজীপুরের প্রযুক্তিভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা

বর্তমান সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের লক্ষ্যে প্রযুক্তিনির্ভর মানবসম্পদ তৈরি করতে চায়। সেই লক্ষ্য পূরণে এমন বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। গাজীপুরে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটি হতে পারে এক মডেল উদাহরণ, যেখানে উচ্চমানের প্রযুক্তি শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের সুযোগ থাকবে।

গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম পরিবর্তন এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগ ও আন্দোলনের ফলেই সম্ভব হয়েছে এই পরিবর্তন। ‘ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বাংলাদেশ’ নামটি প্রযুক্তি নির্ভর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর এক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি। এটি শুধু একটি নাম নয়, বরং একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিযাত্রার সূচনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *