ঢাকা কলেজে রমজান: এক উৎসবমুখর উদযাপন

ঢাকা কলেজে রমজান এক উৎসবমুখর উদযাপন
ঢাকা কলেজে রমজান এক উৎসবমুখর উদযাপন

ঢাকা কলেজের ইতিহাসে এবারকার রমজান এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় উৎসব পালনের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও, এবারের রমজান উদযাপন ছিল ব্যতিক্রম। ঢাকা কলেজে ক্যাম্পাসজুড়ে তিন শতাধিক ইফতার মাহফিল, ইসলামিক সেমিনার, নাশিদ প্রতিযোগিতা, কুরআন বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে রমজানের উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

অতীতের প্রতিবন্ধকতা ও নতুন পরিবর্তন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পূর্বে ঢাকা কলেজে ইসলামিক কার্যক্রম পালন কঠিন ছিল। ইফতার মাহফিল আয়োজনের ক্ষেত্রে কলেজ প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের সহায়তা পাওয়া যেত না, বরং বাধার সম্মুখীন হতে হতো। নিষিদ্ধ সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ইফতার আয়োজনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হতো। অডিটোরিয়াম, গ্যালারি ব্যবহারের অনুমতিও দেওয়া হতো না।

ঢাকা কলেজ ডিবেটিং সোসাইটির (ডিসিডিএস) সভাপতি শাহাদাত হোসাইন জানান, গত বছর কলেজ প্রশাসন ইফতার আয়োজনের অনুমতি দেয়নি, ফলে তারা ক্যাম্পাসের বাইরে একটি রেস্টুরেন্টে ইফতারের আয়োজন করতে বাধ্য হন। তবে, শেষ মুহূর্তে অনুমতি পেলেও প্রস্তুতির অভাবে তা যথাযথভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।

জুলাই বিপ্লব পরবর্তী পরিবর্তন

এবারের রমজানে কলেজ প্রশাসনের শিক্ষার্থীবান্ধব পদক্ষেপের ফলে উৎসবমুখর পরিবেশে ইফতার আয়োজিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আয়োজনগুলোতে অধ্যক্ষসহ শিক্ষকবৃন্দও অংশগ্রহণ করেছেন, যা শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা।

এ বছর ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ব্যতিক্রমী আয়োজন সম্পন্ন করেছে। ইসলামি ছাত্রশিবির মসজিদ সাজিয়ে মুসলিম সংস্কৃতির এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হলভিত্তিক ইফতার বিতরণ করেছে এবং খাবারের দাম কমানোর জন্য অধ্যক্ষ বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণ ইফতার ও সেমিনার আয়োজন করেছে। তাবলীগ জামাত প্রতিদিন বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের জন্য ইফতারের ব্যবস্থা করেছে।

শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ ও অভিজ্ঞতা

ব্যক্তিগতভাবে ইসলামিক সেমিনার আয়োজন করেছেন ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী জিহাদ হোসাইন। সেমিনারে আলোচক ছিলেন ইসলামিক স্কলার অধ্যাপক মুখতার আহমেদ। জিহাদ হোসাইন জানান, বিগত সময়ে সরকার নৈতিক শিক্ষাকে উপেক্ষা করেছিল এবং ধর্মীয় কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেছিল। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে ইসলামিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে।

কলেজ প্রশাসনের নানা উদ্যোগও শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রমজানের শুরুতেই মসজিদের কার্পেট পরিবর্তন করা হয়, শিক্ষার্থীদের জন্য অডিটোরিয়াম, গ্যালারি উন্মুক্ত করা হয় এবং সেহেরির সময় ক্যাফেটেরিয়া চালু রাখা হয়। এসব উদ্যোগ ক্যাম্পাসকে ইসলামি সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল উদাহরণে পরিণত করেছে।

কলেজ প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, “শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে রমজান উদযাপিত হয়েছে। একদিনে ১৬টি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে আমি সাতটিতে অংশ নিতে পেরেছি। শিক্ষার্থীদের এমন আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয়।”

ঢাকা কলেজের এবারের রমজান উদযাপন এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে ইসলামিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পেরেছে, যা রমজানকে আরও অর্থবহ করে তুলেছে। ভবিষ্যতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *