মুক্তিযোদ্ধাসহ সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হয়েছেন ঢাকা মেডিকেলসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা সোমবারের মধ্যে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল পুনঃপ্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ ও স্লোগান
শহীদ মিনারে সমবেত শিক্ষার্থীরা “কোটা না মেধা, মেধা মেধা”, “মেডিকেলে কোটা কেন, প্রশাসন জবাব চাই”, “৪০ পেয়ে চান্স হয়, ৭৩ কেন বাদ হয়”সহ বিভিন্ন স্লোগানে তাদের দাবি তুলে ধরেছেন। ঢাকার অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এই আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য
ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক আব্দুল ওহাব বলেন, “ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ বা ৪১ পেয়ে অনেকে চান্স পেলেও ডাবল নম্বর পেয়েও অনেকে চান্স পায়নি। এটা বৈষম্য নয় তো কী?” তিনি শিক্ষার্থীদের রাজপথে থেকে তাদের অধিকার আদায়ের আহ্বান জানান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী দোহা বলেন, “বৈষম্যের অবসানের জন্য আগেও আন্দোলন হয়েছে। তবুও এমন বৈষম্যমূলক নীতির দরকার কী? যেখানে পাশ নম্বর ৪০, সেখানে ৩৭ বা ৩৮ পেয়ে কেউ চান্স পেতে পারে না।”
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা কোটায় অনেকেই ৩০-৩৫ নম্বর কম পেয়েও চান্স পেয়েছে। আমরা এটি মেনে নিতে পারি না। আজকের মধ্যে সকল কোটার বিলুপ্তি ও পুনরায় ফল প্রকাশের দাবি জানাই।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমর্থন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পরও আমরা এমন বৈষম্যমূলক কোটা দেখতে পাচ্ছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দ্রুততম সময়ে ফল পুনঃপ্রকাশ চাই।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুরুল গণি সগীর অভিযোগ করেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে আজও বৈষম্যমূলক নীতির বাস্তবায়ন হচ্ছে। যদি শিক্ষার্থীদের দাবি না মানা হয়, তাহলে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পদত্যাগ করা উচিত।”
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এক লাখ ৩১ হাজার ৭২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬০ হাজার ৯৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। পাশের হার ৪৫.৬২ শতাংশ। সরকারি মেডিকেল কলেজের জন্য ৫ হাজার ৩৮০টি আসনে ৫ হাজার ৩৭২ জন নির্বাচিত হয়েছেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময়সীমা ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বেসরকারি কলেজে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি ২৩ জানুয়ারি প্রকাশ হবে।
কোটা সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নতুন করে এ বিষয়টিকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।