
শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড—এই কথাটি আমরা প্রায়শই শুনে থাকি। কারণ একটি জাতিকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিতে হলে তার নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের শিক্ষিত হওয়া একান্ত প্রয়োজন। কিন্তু যাঁরা দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে আমরা কতটা জানি? আজকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো বাংলাদেশের ১০ জন শীর্ষ রাজনীতিবিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা। পাঠকের জানার কৌতূহল মেটাতে আমরা চেষ্টা করেছি তাঁদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, ডিগ্রি এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো তুলে ধরতে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় বগুড়ায়। এরপর তিনি কলকাতার হেয়ার স্কুল এবং ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি হয়ে ১৯৫৫ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হন। সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকাকালীন তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। যদিও তাঁর শিক্ষা মূলত সামরিক ঘরানার, তবুও নেতৃত্ব ও রাষ্ট্র পরিচালনায় তাঁর দক্ষতা প্রশংসনীয়।
প্রাথমিক শিক্ষা | বগুড়া |
মাধ্যমিক | হেয়ার স্কুল (কলকাতা), সেন্ট গ্রেগরি স্কুল (ঢাকা) |
সামরিক শিক্ষা | পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি (কমিশনপ্রাপ্ত ১৯৫৫) |
উচ্চতর প্রশিক্ষণ | যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কে সামরিক কোর্স |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাজীবন শুরু করেন গোপালগঞ্জের গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল ও কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়ন করেন, যেখানে তিনি আইএ (ইন্টারমিডিয়েট) পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন, যদিও রাজনৈতিক কারণে ডিগ্রি সম্পূর্ণ হয়নি। ২০১১ সালে তাঁর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
প্রাথমিক | গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় |
মাধ্যমিক | গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল |
উচ্চ মাধ্যমিক | ইসলামিয়া কলেজ, কলকাতা (আইএ) |
বিশ্ববিদ্যালয় | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আইন বিভাগ (অপূর্ণ ডিগ্রি) |
শেখ হাসিনা
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। পড়াশোনা শুরু করেন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে, এরপর আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছেন।
স্কুল | আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় |
বিশ্ববিদ্যালয় | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (স্নাতক, ১৯৭৩) |
সম্মাননা | হার্ভার্ড, রাশিয়া সহ বহু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট |
বেগম খালেদা জিয়া
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শিক্ষাজীবন দিনাজপুর মিশন স্কুলে শুরু হয়। পরে তিনি দিনাজপুর গার্লস স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে বিবাহিত জীবনে প্রবেশের কারণে আর শিক্ষাজীবন এগিয়ে নেওয়া হয়নি।
স্কুল | দিনাজপুর মিশন স্কুল ও গার্লস স্কুল (অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত) |
বিয়ে পরবর্তী শিক্ষাজীবন বন্ধ |
সজীব ওয়াজেদ জয়
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সজীব ওয়াজেদ জয় শিক্ষাজীবনে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা অর্জন করেছেন। ভারতের নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে মাধ্যমিক শেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আরলিংটন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকপ্রশাসনে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
স্কুল | সেন্ট জোসেফ কলেজ, নৈনিতাল (ভারত) |
স্নাতক | কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস |
স্নাতকোত্তর | পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় |
তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা হয় ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে। এরপর তিনি সেন্ট জোসেফ কলেজে ভর্তি হন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও লোকপ্রশাসন বিভাগে অধ্যয়ন শুরু করলেও স্নাতক ডিগ্রি শেষ করতে পারেননি। পরবর্তীতে তিনি ব্যবসা ও রাজনীতিতে যুক্ত হন।
মাধ্যমিক | ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজ |
বিশ্ববিদ্যালয় | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (স্নাতক অসম্পূর্ণ) |
বর্তমানে | লন্ডনে আইন বিষয়ে শিক্ষারত (অপ্রতিষ্ঠিত তথ্য) |
ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন, যা তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ভিত্তি গড়ে দেয়। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, শেখ হাসিনা শিক্ষা, তারেক রহমান পড়াশোনা, সজীব ওয়াজেদ জয় ডিগ্রি, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শিক্ষা, নাহিদ ইসলাম ছাত্র আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন, জিয়াউর রহমান সামরিক শিক্ষা।
মাধ্যমিক | বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় |
উচ্চ মাধ্যমিক | নোয়াখালী সরকারি কলেজ |
স্নাতক | রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি একসময় বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে ঢুকে ঢাকা কলেজসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষা ও রাজনীতির সমন্বয়ে তিনি দলীয় নেতৃত্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর | অর্থনীতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
কর্মজীবন | বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে অধ্যাপনা |
নাহিদ ইসলাম
জাতীয় নাগরিক পার্টির উদীয়মান নেতা নাহিদ ইসলাম সেন্ট জোসেফ হাই স্কুল ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। তাঁর অনার্স থিসিস ছিল ছাত্র আন্দোলনের ব্যর্থতা নিয়ে। তিনি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন এবং পরবর্তীতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
মাধ্যমিক | সেন্ট জোসেফ হাই স্কুল |
উচ্চ মাধ্যমিক | সরকারি বিজ্ঞান কলেজ |
স্নাতক ও মাস্টার্স | সমাজবিজ্ঞান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
থিসিস | ছাত্র আন্দোলনের ব্যর্থতা |
ভূমিকা | কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক |
হাসনাত আব্দুল্লাহ
জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলীয় সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ দেবিদ্বার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং পারুয়ারা আব্দুল মতিন খসরু কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে তাঁর পরিচিতি রয়েছে।
মাধ্যমিক | দেবিদ্বার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় |
উচ্চ মাধ্যমিক | পারুয়ারা আব্দুল মতিন খসরু কলেজ |
স্নাতক | ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
ভূমিকা | ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা |
একটি দেশের নেতৃত্ব কেমন হবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে সেই নেতার শিক্ষাগত ভিত্তির ওপর। বাংলাদেশের রাজনীতিবিদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, শেখ হাসিনা শিক্ষা, তারেক রহমান পড়াশোনা, সজীব ওয়াজেদ জয় ডিগ্রি, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শিক্ষা, নাহিদ ইসলাম ছাত্র আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন, জিয়াউর রহমান সামরিক শিক্ষা। বাংলাদেশের বর্তমান ও প্রাক্তন রাজনীতিবিদদের শিক্ষাজীবনের দিকে তাকালে দেখা যায়, কারো শিক্ষাগত প্রেক্ষাপট ছিল শক্তিশালী, আবার কারো ছিল সীমিত। তবুও শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার মিশ্রণে তাঁরা রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।