সাত কলেজ আন্দোলন ২০২৫: ঈদের পর ঘেরাও কর্মসূচি

সাত কলেজ আন্দোলন ২০২৫-এ অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি
পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ


সাত কলেজ আন্দোলন ২০২৫ আবারও শিক্ষাঙ্গনে উত্তেজনা তৈরি করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল ও পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঈদের পর নতুন করে ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে তারা এবার রাজপথে না নেমে সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও করবেন।

সাত কলেজ আন্দোলন ২০২৫: শিক্ষার্থীদের দাবির পটভূমি

রাজধানীর যে সাতটি সরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রয়েছে সেগুলো হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ এবং সরকারি বাঙলা কলেজ। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়ে আসছেন, এই কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্ত করে একটি স্বতন্ত্র শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসার।
চলতি বছরের শুরুতে সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি আংশিকভাবে মেনে নিয়ে উচ্চশিক্ষা সংশ্লিষ্ট একটি যুগান্তকারী পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এতে সাত কলেজের জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা আসে এবং এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (UGC) দায়িত্ব প্রদান করা হয়।

সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং সরকারের প্রতিক্রিয়া

ইউজিসির অধীনে একটি কমিটি গত পাঁচ মাস ধরে কাজ করছে এই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের লক্ষ্যে। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি নামও নির্ধারণ করা হয়েছে—“ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি”। একইসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক একেএম ইলিয়াসকে সাত কলেজের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নাম প্রস্তাব ও অন্তর্বর্তী প্রশাসকের নিয়োগের বাইরে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। তারা বলছেন, প্রশাসন যদি ঈদের আগেই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ঈদের পরেই তারা আন্দোলনে ফিরবেন।
আরও পড়ুনঃ গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি: নতুন পরিচয়

সাত কলেজ আন্দোলন ২০২৫: শিক্ষার্থীদের দাবি ও অবস্থান

গত ১৭ মে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হলো:

ক্রমদাবি
২৪ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রশাসন গঠন
দুই কার্যদিবসের মধ্যে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু
পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা প্রকাশ
এক মাসের মধ্যে অধ্যাদেশ জারি
আন্দোলনকারীদের সব একাডেমিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা

উল্লেখ্য, এসব দাবির প্রেক্ষিতে ১৯ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে অন্তর্বর্তী প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিলে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত হয়। কিন্তু এরপর থেকে বাকি দাবিগুলোর বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

আন্দোলন পুনরায় শুরু হতে পারে ঈদের পর

সাত কলেজ আন্দোলনের অন্যতম প্রতিনিধি ও বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসাইন বলেন, “আমরা জানি অধ্যাদেশ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কিন্তু রূপরেখা তো প্রকাশ করা সম্ভব। শিক্ষার্থীরা দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগছে। যদি ১৬ জুনের মধ্যে কোনো কার্যকর অগ্রগতি না হয়, তাহলে আমরা ঈদের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে যাব। তবে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করব না।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাদের যেন একাডেমিক সুযোগ-সুবিধা ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তরিক।”

শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও হতাশা

সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধ্যাদেশ জারির মতো বড় সিদ্ধান্তে সময় লাগতেই পারে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা বা ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে এত বিলম্বের যৌক্তিকতা নেই। বরং এর ফলে তারা পড়ালেখায় অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও হতাশার শিকার হচ্ছেন।

এক শিক্ষার্থী বলেন, “পাঁচ মাস পার হয়ে গেছে, অথচ আমরা এখনও জানি না ভর্তি কবে হবে, কোন কাঠামোয় চলবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। এসব অস্বচ্ছতার মধ্যেই আমরা পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছি।”

প্রশাসনের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আন্দোলন সাময়িক স্থগিত হওয়ার পর থেকে কার্যত নীরব হয়ে গেছে। কোনো দাপ্তরিক ঘোষণাও আসেনি এখন পর্যন্ত। এতে করে তারা মনে করছেন, সরকার হয়তো তাদের দাবি বাস্তবায়নে অনাগ্রহী।

বিশ্লেষকদের মতে, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলোর বাস্তবায়নে বিলম্ব হলে এ আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে এবং এর প্রভাব পড়তে পারে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর।

সামনে কী?

বর্তমানে ছাত্রদের দৃষ্টি ১৬ জুন তারিখের দিকে। যদি ওই সময়ের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখা ও অধ্যাদেশ জারির ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসে, তাহলে ঈদের পর ফের রাজপথে ফিরতে পারেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

তবে এবার তাদের কৌশল হবে নতুন। তারা সরাসরি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচির দিকে এগোতে পারেন, যাতে জনদুর্ভোগ না হয়। এর ফলে আন্দোলনের স্বরূপ বদলে যাবে এবং এটি আরও রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও প্রশাসনিক ইস্যুতে রূপ নিয়েছে। সরকারের সদিচ্ছা ও কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। ঈদের পর এই আন্দোলন নতুন মাত্রা নিতে পারে—তাই এখনই সময় কার্যকর, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের। অন্যথায় দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন করে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *