বঙ্গবন্ধুর চামড়া নিয়ে ডুগডুগির বিতর্ক: মতিয়া চৌধুরীকে ঘিরে প্রচলিত গল্পের সত্যতা

বঙ্গবন্ধুর চামড়া নিয়ে ডুগডুগির বিতর্ক: মতিয়া চৌধুরীকে ঘিরে প্রচলিত গল্পের সত্যতা
ছবিঃ মতিয়া চৌধুরী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় তার শরীরের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর কথা বলেছিলেন মতিয়া চৌধুরী—এমন একটি দাবি নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী একাধিকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেছেন। এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা দেখা যায়। তবে এ বিষয়ে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং সত্যতা যাচাই করা গুরুত্বপূর্ণ।

ছাত্রজীবনে মতিয়া চৌধুরী ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা এবং ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি ছয় দফার সমর্থনকারী এবং আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে “অগ্নিকন্যা” খেতাব অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি চীনপন্থী ন্যাপের নেতৃত্বে যুক্ত হন।

১৯৭৩ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)-তে যোগ দেন। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র ইউনিয়ন এবং সিপিবি’র সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তাদের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতেন। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবেও সিপিবি সক্রিয় ভূমিকা রাখে এবং মতিয়া চৌধুরী বাকশালের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন।

মতিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুবিরোধিতার অভিযোগ করা হলেও এর পেছনে কোনো নির্ভরযোগ্য দলিল বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মস্কোপন্থী ন্যাপ বা কমিউনিস্ট পার্টি বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কখনো অবস্থান নেয়নি। বরং মতিয়া চৌধুরীর স্বামী বজলুর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

১৯৭৯ সালে মতিয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং দলের কৃষি সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। দুঃসময়ে দলে যোগ দিয়ে তিনি দলের প্রতি একনিষ্ঠতা প্রদর্শন করেন। বর্তমানেও তিনি সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পালন করছেন।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্য এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি নিয়ে আলোচনা হলেও বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করার নির্দিষ্ট প্রমাণ কেউ উপস্থাপন করতে পারেননি। এ বিষয়ে মতিয়া চৌধুরীর ভূমিকা বা বক্তব্য সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় এ ধরনের দাবি প্রশ্নবিদ্ধ।

মতিয়া চৌধুরী সম্পর্কে প্রচলিত এ ধরনের অভিযোগ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে খাপ খায় না। তার রাজনৈতিক জীবনের অর্জন এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে এ অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়া কঠিন। এজন্য ইতিহাসের সঠিক ব্যাখ্যা এবং নির্ভুল তথ্য উপস্থাপন করা জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *