
২০২৫ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতির বিষয়টি নজরে আসার পর বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের জন্য আজ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) একটি নির্দেশনা জারি করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
জারিকৃত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলমান এসএসসি পরীক্ষায় প্রতিদিনই কিছু শিক্ষার্থী যারা পূর্বে ফরম পূরণ করেছে, তারা একাধিক বিষয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেই অনুপস্থিত থাকছে। এই প্রবণতা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করেছে বোর্ড।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য পাঠানোর নির্দেশ
নির্দেশনায় বোর্ডের আওতাধীন প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে, তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে যারা পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেছিল কিন্তু এক বা একাধিক বিষয়ে অংশ নেয়নি, এমন প্রতিটি পরীক্ষার্থীর তথ্য আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে গুগল ফর্মের মাধ্যমে জমা দিতে হবে।
তথ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতিটি অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর জন্য আলাদা করে একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে। এক ফর্মে একাধিক পরীক্ষার্থীর তথ্য দেওয়া যাবে না। আবার একজন পরীক্ষার্থীর জন্য একাধিক ফর্ম পূরণ করাও নিষেধ।
অভিভাবকদের সঙ্গেও যোগাযোগের নির্দেশ
পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে সরাসরি কিংবা ফোনে কথা বলে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের (যেমন বাবা, মা, পরিবারের অন্য সদস্য বা আইনগত অভিভাবক) কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
এছাড়া, কোন কোন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে, তা নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
শিক্ষা বোর্ডের উদ্বেগ
বোর্ডের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “প্রতিবছর কিছু পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলেও এ বছর তা তুলনামূলকভাবে বেশি মনে হচ্ছে। এর পেছনে সামাজিক, পারিবারিক কিংবা শিক্ষাগত কোনো সমস্যা আছে কি না, সেটি বোঝার জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “অনুপস্থিতির তথ্য বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের শিক্ষানীতিতে প্রয়োজনে সমন্বয় আনা হবে। লক্ষ্য হলো, কোনো শিক্ষার্থী যেন অযথা পরীক্ষার বাইরে না থাকে।”
বিশ্লেষকদের মতামত
শিক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, এসএসসি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি কেবল ব্যক্তি পর্যায়ের বিষয় নয়, এটি বৃহত্তর শিক্ষা ব্যবস্থারও একটি সংকেত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, “একজন শিক্ষার্থী এসএসসি ফরম পূরণ করেও কেন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না, তার পেছনে হতে পারে অর্থনৈতিক দুরবস্থা, পারিবারিক সমস্যা, মানসিক চাপ, বা পড়ালেখায় অনাগ্রহ। এসব কারণ চিহ্নিত না করলে ভবিষ্যতে ড্রপআউটের হার আরও বাড়বে।”
সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা অনেক সময় শেষ মুহূর্তে নানা সমস্যায় পড়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে ব্যর্থ হয়।
তাদের মধ্যে কারো বাবা-মা অসুস্থ বা অর্থনৈতিক সংকটে থাকলে সন্তানদের পরীক্ষা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, নারী শিক্ষার্থীদের বিয়ের চাপ, সামাজিক বিধিনিষেধ কিংবা নিরাপত্তাজনিত কারণে পরীক্ষায় অংশগ্রহণে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ সরকারি ব্যাংকে আইটি খাতে বড় নিয়োগ
সমাধান ও সুপারিশ
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির পেছনের কারণগুলো বুঝে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যেমন, শিক্ষার্থীদের মানসিক ও একাডেমিক সহায়তা বাড়ানো, পরিবারকে সচেতন করা, স্কুল পর্যায়ে কাউন্সেলিং ব্যবস্থা চালু করা এবং অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান — এসব উদ্যোগ নিতে হবে সমন্বিতভাবে।
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির প্রবণতা প্রশাসনের জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা। শুধু ফরম পূরণ করানো নয়, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাটাও এখন সময়ের দাবি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অনুসন্ধান কার্যক্রম এই সংকটের পেছনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে পারে। তবে সেই সঙ্গে প্রয়োজন নীতিগত পরিবর্তন, সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবিকতা ও সমতা প্রতিষ্ঠা। শুধুমাত্র উপসর্গ নিরসনে নয়, রোগের মূল খোঁজে নেমেছে বোর্ড — আর সেটাই হতে পারে ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের জন্য এক আশার আলো।