
মোস্তাফিজ দিল্লি ক্যাপিটালস আইপিএল ২০২৫ নিয়ে শুরুতেই রেকর্ড গড়লেন বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমান। চলতি আসরের বাকি অংশের জন্য দিল্লি ক্যাপিটালস ৬ কোটি রুপিতে দলে নিয়েছে তাকে। এর মাধ্যমে তিনি আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামী বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে নাম লেখান।
মোস্তাফিজুর রহমান: রেকর্ড গড়া এক বাংলাদেশি ক্রিকেটার
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘কাটার মাস্টার’ মোস্তাফিজুর রহমান একাধিকবার আইপিএলে খেলেছেন বিভিন্ন দলের হয়ে। তবে ২০২৫ আইপিএলে তার অন্তর্ভুক্তি যেন ইতিহাস গড়ল। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আইপিএল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার তরুণ ব্যাটার জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের বদলে মোস্তাফিজকে দলে নিয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। এ চুক্তির জন্য তাদের গুণতে হয়েছে ৬ কোটি রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
এই অর্থমূল্য শুধু মোস্তাফিজের জন্য নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের এক অনন্য রেকর্ড। এর আগে ২০০৯ সালে মাশরাফি বিন মুর্তজা কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ৬ লাখ ডলারে খেলেছিলেন, যা সে সময়কার বাজারদরে ছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা। সেই রেকর্ড ভেঙে মোস্তাফিজ এখন দেশের সবচেয়ে দামি আইপিএল ক্রিকেটার।
আইপিএলের ইতিহাসে মোস্তাফিজের পদচারণা
মোস্তাফিজ আইপিএলে প্রথম খেলে ওঠেন ২০১৬ সালে, সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে। অভিষেক মৌসুমেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে আইপিএলে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন তিনি। পরে তিনি মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, রাজস্থান রয়্যালসের হয়েও খেলেছেন। যদিও ২০২৪ সালের মেগা নিলামে ভিত্তিমূল্য দুই কোটি রুপি নির্ধারণ করা হলেও কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি তাকে দলে নেয়নি।
কিন্তু সময় বদলে যায় দ্রুত। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়েই দিল্লি ক্যাপিটালস তাকে বড় অঙ্কে দলে ভিড়িয়ে দেখিয়ে দিল—ফর্ম, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা কখনো অবমূল্যায়িত হয় না। তার বোলিংয়ের বৈচিত্র্য এবং ডেথ ওভারে কার্যকারিতা দিল্লির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত, যদি না আইপিএল স্থগিত হতো।
মোস্তাফিজের অন্তর্ভুক্তি: দিল্লির কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি
দিল্লি ক্যাপিটালসের দলে মোস্তাফিজুর রহমানের অন্তর্ভুক্তি তাদের বোলিং ইউনিটে এক নতুন মাত্রা যোগ করার কথা ছিল। বিশেষ করে পিচ অনুযায়ী বলের গতি ও কাটিং ব্যবহারে তিনি একজন পরীক্ষিত নাম। আইপিএলের বাকি অংশে ডেথ ওভার কন্ট্রোল, মিড ইনিংস ব্রেকথ্রু এবং অভিজ্ঞতায় ভর করে দিল্লি তাকে মূল বোলিং অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করছিল।
মোস্তাফিজের আগমন কেবল পারফরম্যান্স নয়, বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি দর্শকের আগ্রহও বাড়িয়ে দিত ফ্র্যাঞ্চাইজিটির প্রতি। ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়ানোসহ স্পন্সরশিপের ক্ষেত্রেও তার উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত।
আরও পড়ুনঃ বিরাট কোহলির টেস্ট অবসর: সৌরভের খোলামেলা প্রতিক্রিয়া ও নেতৃত্ব সংকটে ভারতীয় ক্রিকেট দল
আইপিএল স্থগিত: ধর্মশালায় আলো নিভে যাওয়া এক রুদ্ধদ্বার রাত
১৭ মে থেকে আইপিএলের দ্বিতীয় পর্ব পুনরায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই ঘটে গেল নাটকীয় ঘটনা। ১৬ মে বৃহস্পতিবার ধর্মশালায় পাঞ্জাব কিংস বনাম দিল্লি ক্যাপিটালসের খেলা চলাকালীন সময়ে জম্মু অঞ্চলে পাকিস্তানি হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের দাবি, এই হামলার জেরে উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্যে অ্যালার্ট জারি করা হয় এবং অনেক জায়গায় নিরাপত্তার কারণে আলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এরই প্রেক্ষিতে ধর্মশালার ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইট বন্ধ হয়ে যায় এবং ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় বিসিসিআই ও আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক। অবশেষে সিদ্ধান্ত হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে খেলোয়াড় ও দর্শকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আইপিএল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখা হবে।
বিসিসিআই-এর সিদ্ধান্ত: “সব পক্ষের নিরাপত্তা সবার আগে”
বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিসিসিআই ও আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের শীর্ষ কর্মকর্তারা। সিদ্ধান্তটি যে সহজ ছিল না, তা বোঝা যায় বিসিসিআই-এর সিইও অরুণ ধুমালের মন্তব্য থেকে। তিনি পিটিআইকে দেওয়া বিবৃতিতে বলেন—
“আমরা প্রতিমুহূর্তে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সরকারিভাবে এখনো কোনো চূড়ান্ত নির্দেশনা আসেনি, কিন্তু মাঠের নিরাপত্তা ও সমগ্র আয়োজনের প্রতি সম্মান রেখে আমরা আইপিএল স্থগিত করছি।”
তিনি আরও বলেন, “শুক্রবারের ম্যাচ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল, কিন্তু পরিস্থিতির গতিপথ দেখে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের এখনই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সব পক্ষের নিরাপত্তা এবং দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নেওয়া হবে।”
আইপিএল স্থগিত: কী প্রভাব পড়বে বিশ্ব ক্রিকেটে?
আইপিএল কেবল ভারতীয় লিগ নয়—এটি এখন একটি গ্লোবাল ব্র্যান্ড। এখান থেকে উঠে আসেন ভবিষ্যতের তারকারা, বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের একত্রে দেখার বিরল সুযোগ তৈরি হয়, বিপুল বিনিয়োগ ও স্পনসরশিপ জড়িয়ে থাকে এর সঙ্গে। ফলে আইপিএল বন্ধ হওয়া মানে শুধু ভারতের ক্ষতি নয়, ক্রিকেটবিশ্বের অর্থনীতিরও বড় ক্ষতি।
বিশ্বজুড়ে আইপিএল সম্প্রচার হয় শতাধিক দেশে। মোবাইল অ্যাপ, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, বিজ্ঞাপন ও ব্র্যান্ড চুক্তিতে এটির প্রভাব কোটি কোটি ডলারের। চলতি আইপিএল স্থগিত হওয়ার কারণে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো যেমন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে, তেমনি ভেঙে পড়তে পারে খেলোয়াড়দের প্রস্তুতির রুটিন।
বাংলাদেশি দর্শকদের হতাশা: মোস্তাফিজকে মাঠে দেখা হবে তো?
বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এটি ছিল এক আনন্দঘন মুহূর্ত—দীর্ঘদিন পর মোস্তাফিজ আবারও আইপিএলে ফিরছেন, তাও রেকর্ড মূল্যে। অনেকেই প্রস্তুত ছিলেন মোস্তাফিজের দুর্দান্ত বোলিং দেখতে। কিন্তু আইপিএল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সেই স্বপ্ন যেন বাধা পেল বাস্তবতার দেয়ালে।
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—আইপিএল কি পুনরায় শুরু হবে? আর যদি হয়, মোস্তাফিজ তখনও কি দলে থাকবেন? চুক্তির মেয়াদ, ফর্ম, আন্তর্জাতিক ব্যস্ততা—সব মিলিয়ে এটি এখন এক অনিশ্চিত অধ্যায়। তবে একথা নিশ্চিত, মোস্তাফিজের বর্তমান অর্জন তাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
সংক্ষেপে কী থাকল প্রতিবেদনে:
মূল বিষয় | তথ্য |
---|---|
মোস্তাফিজের দল | দিল্লি ক্যাপিটালস |
পারিশ্রমিক | ৬ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮.৫৪ কোটি টাকা) |
পূর্বের রেকর্ড | মাশরাফি বিন মুর্তজা – ৬ লাখ ডলার (প্রায় ৪ কোটি টাকা) |
কেন অন্তর্ভুক্তি | জেক ফ্রেজার-ম্যাকগার্কের পরিবর্তে |
আইপিএল স্থগিত | জম্মুতে হামলার প্রেক্ষিতে, ধর্মশালায় ম্যাচ বন্ধ |
প্রধান কারণ | ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা |
বিসিসিআই মন্তব্য | “পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে” |
মোস্তাফিজের ভবিষ্যৎ | অনিশ্চিত, পরিস্থিতি নির্ভর |
মোস্তাফিজুর রহমানের দিল্লি ক্যাপিটালসে যোগদান নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য গর্বের বিষয়। তিনি আবারও প্রমাণ করলেন—দক্ষতা, পরিশ্রম এবং একাগ্রতা থাকলে যে কেউ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইতিহাস গড়তে পারেন। তবে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে আইপিএল স্থগিত হওয়ায় তার মাঠে নামা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
এখন প্রশ্ন—কবে মাঠে গড়াবে আইপিএল? আদৌ কি মোস্তাফিজ খেলবেন সেই লিগে? আপাতত সে প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। তবে যেটা নিশ্চিত, এই অর্জন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আপনি যদি এই ধরনের আরও খেলাধুলা ও ক্রিকেট সম্পর্কিত আপডেট পেতে চান, আমাদের পেজটি নিয়মিত অনুসরণ করুন এবং শেয়ার করুন আপনার মতামত।