
২০২৫ বাজেট পণ্যের দাম বাড়ার ইঙ্গিত
বাংলাদেশ সরকারের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পণ্যের দাম সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে—এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ২ জুন বিকেল ৩টায় অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি দেশের ৫৪তম জাতীয় বাজেট, যেখানে ২০২৫ বাজেট পণ্যের দাম নিয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রসাধনী পণ্যে শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি
নারীদের ব্যবহৃত লিপস্টিক, আইলাইনার, ফেসওয়াশসহ বিভিন্ন প্রসাধনী পণ্যের আমদানির ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, লিপস্টিকের ক্ষেত্রে এটি ২০ ডলার থেকে ৪০ ডলারে উন্নীত হতে পারে । ২০২৫ বাজেট পণ্যের দাম পরিবর্তনের ফলে বিদেশি প্রসাধনী পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
তামাক শিল্পে শুল্ক বৃদ্ধি
সিগারেট পেপারের সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে । এর ফলে সিগারেটের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যা ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়াতে পারে।
নির্মাণ সামগ্রী: রড ও স্টিল
নির্মাণ খাতে ব্যবহৃত রড ও স্টিলের আমদানি ও উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আমদানিতে ভ্যাট ২০ শতাংশ থেকে ২৩ শতাংশ এবং উৎপাদনে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে প্রতি টন রডের দাম প্রায় ১,৪০০ টাকা বাড়তে পারে ।
এয়ার কন্ডিশনার ও ফ্রিজ
ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনার প্রস্তুতকারকদের ওপর ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে । এই পরিবর্তনের ফলে এসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে।
মোটরসাইকেল ও সাইকেলের যন্ত্রাংশ
মোটরসাইকেলের ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে শুল্ক কমানো হলেও দাম কমেনি, তাই এবার শুল্ক-ভ্যাট কিছুটা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে ।
দেশীয় মোবাইল ফোন
মোবাইল ফোন উৎপাদন ও সংযোজন খাতে ভ্যাট ২-২.৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যার ফলে দেশীয় মোবাইল ফোনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে ।
আরও পড়ুনঃ শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি মানবতাবিরোধী অপরাধে
ব্যাটারি চালিত রিকশা
ব্যাটারিচালিত রিকশার ১,২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে । এই পরিবর্তন রিকশার উৎপাদন ব্যয় বাড়াতে পারে।
২০২৫ বাজেট পণ্যের অন্যান্য পণ্য
প্রস্তাবিত বাজেটে আরও কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যেমন:
- বিদেশি চকলেট: ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্য ৪ ডলার থেকে ১০ ডলারে উন্নীত করার প্রস্তাব ।
- বিদেশি খেলনা: শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি।
- হেলিকপ্টার: আমদানি শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব ।([The Daily Star][3])
- টেবিলওয়্যার ও প্লাস্টিক পণ্য: ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব ।
নিচে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে, তার বিস্তারিত তথ্য একটি টেবিল আকারে উপস্থাপন করা হলো:
📊 প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৫-২৬: যেসব পণ্যের দাম বাড়বে
পণ্যের নাম | প্রস্তাবিত পরিবর্তন | সম্ভাব্য প্রভাব |
---|---|---|
লিপস্টিক, আইলাইনার, ফেসওয়াশ | শুল্কায়ন মূল্য ২০ ডলার থেকে ৪০ ডলারে উন্নীত | দাম দ্বিগুণ হতে পারে |
সিগারেট পেপার | সম্পূরক শুল্ক ৬০% থেকে ১০০% | সিগারেটের দাম বাড়বে |
রড ও স্টিল | আমদানি ভ্যাট ২০% → ২৩%, উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট ১৫% → ২০% | প্রতি টন রডে প্রায় ১,৪০০ টাকা বৃদ্ধি |
ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনার | প্রস্তুতকারকদের ভ্যাট ৭.৫% → ১৫% | দাম বাড়বে |
মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ | শুল্ক ও ভ্যাট সামান্য বৃদ্ধি | খুচরা যন্ত্রাংশ ও বাইকের দাম বাড়বে |
দেশীয় মোবাইল ফোন | ভ্যাট ২% → ৪.৫% | ফোনের দাম কিছুটা বাড়তে পারে |
ব্যাটারিচালিত রিকশা মোটর | ডিসি মোটরে কাস্টমস শুল্ক ১% → ১৫% | রিকশা উৎপাদন খরচ বাড়বে |
বিদেশি চকলেট | শুল্কায়ন মূল্য ৪ ডলার → ১০ ডলার | দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে |
বিদেশি খেলনা | শুল্কায়ন মূল্য বৃদ্ধি | খেলনার দাম বাড়বে |
হেলিকপ্টার | আমদানি শুল্ক ১% → ১০% | ব্যয়বহুল যানবাহনের দাম বাড়বে |
টেবিলওয়্যার ও প্লাস্টিক পণ্য | ভ্যাট ৭.৫% → ১৫% | গৃহস্থালী সামগ্রীর দাম বাড়বে |
এই টেবিলের তথ্যগুলো ২ জুন ২০২৫ প্রকাশিত সরকারি বাজেট খসড়া অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়েছে, যা ১ জুলাই ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। তবে শুল্ক ও কাস্টমস সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাজেট ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর ধরা হবে।
২০২৫ বাজেট পণ্যের দাম: নতুন বাজেটের উপস্থাপনা ও এর বাস্তব প্রভাব
সংসদ না থাকায়, রাষ্ট্রপতি আগামী ৩০ জুন বাজেট অধ্যাদেশে সই করবেন, এবং ১ জুলাই থেকে নতুন বাজেট কার্যকর হবে। তবে বাজেটের অনেক অংশ, বিশেষ করে ট্যাক্স ও কাস্টমসসংক্রান্ত বিষয়গুলো ২ জুন উপস্থাপনের দিন থেকেই কার্যকর হবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ভোক্তাদের ব্যয় বাড়াতে পারে। এই পরিবর্তনগুলোর প্রভাব সরাসরি বাজারে পড়বে, এবং ভোক্তাদের সচেতনভাবে কেনাকাটা করতে হবে।