ডিম আগে না মুরগি? হাজার বছর ধরে চলা বিতর্কের অবসান হল অবশেষে ২০২৫ সালে!

ডিম এবং মুরগী
ছবিঃ ডিম এবং মুরগী

প্রাচীন এককোষী জীব ও প্রাণীর বিবর্তন নিয়ে নতুন গবেষণা। জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়নবিদ মেরিন অলিভেট্টা এবং তার গবেষক দল সম্প্রতি ক্রোমোসফেরা পারকিনসি নামে একটি এককোষী জীবাণু নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পরিচালনা করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এই জীবাণুটি পৃথিবীতে প্রায় ১০০ কোটি বছর ধরে টিকে আছে এবং এটি এমন এক প্রজনন পদ্ধতি অনুসরণ করে, যা প্রাণীদের ভ্রূণের বিকাশের সাথে উল্লেখযোগ্য মিল রাখে।

আবিষ্কারের মূল তথ্য

গবেষণায় উঠে এসেছে যে, ক্রোমোসফেরা পারকিনসি এককোষী হলেও তার আচরণ বহুকোষী প্রাণীর মতো। এর বিভাজন প্রক্রিয়া, যা প্যালিনটোমি নামে পরিচিত, জীবাণুটিকে ছোট ছোট কোষে ভাগ করে। এসব কোষ দেখতে ডিমের মতো এবং প্রাণীর ভ্রূণের প্রাথমিক গঠনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

এ তথ্যের ভিত্তিতে গবেষকেরা ধারণা করছেন, প্রাণীর আগমনের বহু আগেই পৃথিবীতে ডিমের মতো গঠন বিদ্যমান ছিল।

গবেষকের বক্তব্য

জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ওমায়া দুদিন বলেন,

“সি. পারকিনসি এককোষী হলেও তার মধ্যে বহুকোষী আচরণের লক্ষণ দেখা যায়। এটি প্রমাণ করে, প্রাণীদের উদ্ভবের আগে থেকেই ডিমের মতো কাঠামো বিদ্যমান ছিল।”

তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, এটি অভিসারী বিবর্তনের উদাহরণ হতে পারে, যেখানে বিভিন্ন প্রাণী ভিন্নভাবে একই ধরনের বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে।

পুরোনো তত্ত্বের চ্যালেঞ্জ

এর আগে ব্রিটেনের শেফিল্ড ও ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা মুরগির গর্ভাশয়ে পাওয়া ওভোক্লিডিন (ওসি-১৭) নামক একটি প্রোটিন নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। তাঁদের মতে, এই প্রোটিনই ডিম তৈরিতে অপরিহার্য এবং এটি শুধুমাত্র মুরগির গর্ভাশয়েই পাওয়া যায়।

ফলে তাঁরা দাবি করেছিলেন—প্রথমে মুরগি এসেছে, তারপর ডিম।

নতুন গবেষণার প্রভাব

তবে সাম্প্রতিক গবেষণাটি এই পুরোনো তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। গবেষকেরা বলছেন, মুরগির আগমনের বহু আগে থেকেই ডিমের মতো গঠন পৃথিবীতে বিদ্যমান ছিল এবং এককোষী জীবাণুদের মধ্যেও এমন কাঠামো দেখা গেছে।

বিবর্তন ও প্রাণের বিকাশের নতুন ধারণা

এই আবিষ্কার থেকে স্পষ্ট হয় যে পৃথিবীতে জীবনের বিকাশ ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হয়েছে। এটি বহুকোষী প্রাণীজগতের উত্থানের পূর্ববর্তী ধাপগুলোর চিত্র তুলে ধরে।

গবেষণার ভবিষ্যৎ দিক

বিজ্ঞানীরা আরও গভীর গবেষণার মাধ্যমে প্রাণের উৎপত্তি এবং বিবর্তনের ধাপগুলো সম্পর্কে নির্ভুল উত্তর খুঁজে চলেছেন। আপাতত, সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে—ডিমই আগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *