ভর্তিচ্ছুদের পাশে জবি ছাত্রদল: হেল্প ডেস্ক স্থাপন করে মানবিক সহায়তা

ভর্তিচ্ছুদের পাশে জবি ছাত্রদল
ভর্তিচ্ছুদের পাশে জবি ছাত্রদল

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আগত ভর্তিচ্ছুদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রদল। রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে স্থাপন করা হয়েছে একটি হেল্প ডেস্ক।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দেখা যায় ব্যস্ততা—দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহায়তায় সচেষ্ট ছিল ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। জবির মূল ফটকে স্থাপিত এই হেল্প ডেস্ক থেকে দেওয়া হচ্ছে তথ্য সহায়তা, পানীয় সরবরাহ, ব্যাগ ও মোবাইল ফোন সংরক্ষণের ব্যবস্থা, এমনকি শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে সাহস জোগানোর কাজটিও করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

জানা গেছে, এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকায় আগত শিক্ষার্থীদের পথচলায় সহায়ক ভূমিকা রাখা এবং পরীক্ষার দিন যাতে তারা কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলায় না পড়েন, সে নিশ্চয়তা প্রদান।

ছাত্রদলের মানবিক রূপ

হেল্প ডেস্ক পরিচালনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সামসুল আরেফিন। তিনি জানান, “আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। এই হেল্প ডেস্ক আমাদের মানবিক চেতনার একটি বাস্তব প্রতিফলন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে যারা ঢাকায় এসেছে, তাদের যেন কোনো রকম অসুবিধা না হয়, সে লক্ষ্যেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।”

তিনি আরও বলেন, “ছাত্রদল শুধুই একটি রাজনৈতিক সংগঠন নয়, এটি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিবেদিত একটি সামাজিক শক্তি। ভবিষ্যতের মেধাবী নাগরিকদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”

ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেলও হেল্প ডেস্ক কার্যক্রম ঘুরে দেখেন এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি বলেন, “ছাত্রদল সবসময়ই মেধাবী ও আদর্শবান শিক্ষার্থীদের সংগঠন হিসেবে পরিচিত। আজকের এই উদ্যোগ আমাদের সাংগঠনিক আদর্শেরই প্রতিফলন। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পরামর্শ এবং আমাদের নেতাকর্মীদের ঐকান্তিক চেষ্টায় এই মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।”

সেবা কার্যক্রমে ছিলো যেসব সহযোগিতা

হেল্প ডেস্কটিতে মূলত নিম্নোক্ত সেবাসমূহ প্রদান করা হয়:

  •  

তথ্য সহায়তা: ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা কোথায় যাবেন, কোন ভবনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, কীভাবে পৌঁছাতে হবে—এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সহায়তা করেন নেতাকর্মীরা।

  •  
  •  

ব্যাগ ও মোবাইল সংরক্ষণ: পরীক্ষার হলে কোনো ব্যাগ বা ফোন নেওয়া নিষেধ থাকায়, হেল্প ডেস্কে শিক্ষার্থীদের জিনিসপত্র নিরাপদে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা রাখা হয়।

  •  
  •  

পানীয় সরবরাহ: গরম আবহাওয়ায় ক্লান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়।

  •  
  •  

মানসিক সহায়তা: অনেকে ঢাকায় নতুন, পরিবেশ অপরিচিত—তাদের পাশে থেকে সাহস ও আত্মবিশ্বাস জোগান স্বেচ্ছাসেবকরা।

  •  

ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া

ঢাকার বাইরে থেকে আসা এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, “জানতাম না ঢাকায় এসে এমন সহযোগিতা পাব। আমি খুব চিন্তিত ছিলাম ব্যাগ ও মোবাইল রাখার বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু এখানে এসে দেখি তারা সুন্দর ব্যবস্থায় এগুলো নিয়েছেন। অনেক উপকার হয়েছে।”

একজন অভিভাবক বলেন, “আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি। কোথায় যাব, কীভাবে যাব এসব বুঝতে পারছিলাম না। ছাত্রদলের হেল্প ডেস্কের ছেলেরা খুব সহযোগিতা করেছে। এমন সহানুভূতিশীল উদ্যোগ দেখে আমি মুগ্ধ।”

রাজনৈতিক দল নয়, মানবিক সহচর

ছাত্রদলের এই উদাহরণটি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, সংগঠনের কার্যক্রম শুধু রাজনৈতিক চর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে মানবিক ও সামাজিক সহায়তার ক্ষেত্রেও বিস্তৃত হতে পারে। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও সহানুভূতির বীজ বপনের জন্য এ ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ তারেক রহমানের জীবন, কর্ম এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা

ছাত্র রাজনীতির প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি যেখানে ধীরে ধীরে নেতিবাচক হয়ে উঠছিল, সেখানে ছাত্রদলের এই মানবিক সহায়তা এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলে মনে করছেন অনেক শিক্ষাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষক। তাঁরা বলছেন, ছাত্ররাজনীতিকে যদি শিক্ষার্থীবান্ধব ও সমাজবান্ধব করে তোলা যায়, তবে সেটিই হতে পারে একটি কার্যকর ও ইতিবাচক শক্তি।

উদাহরণ হয়ে উঠছে এমন কার্যক্রম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র ছাড়াও অন্যান্য কেন্দ্রেও ছাত্র সংগঠনগুলো যদি এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে, তাহলে তা সারাদেশে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ভর্তি পরীক্ষায় এমন মানবিক সহায়তার নজির খুব বেশি দেখা যায় না। তবে ছাত্রদলের মতো সংগঠন এগিয়ে এলে ভর্তিচ্ছুদের অভিজ্ঞতাও আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় হতে পারে।

ছাত্রদলের নেতারা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতেও তারা এই ধরণের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চান এবং আরও সুসংগঠিত ও পেশাদার পদ্ধতিতে হেল্প ডেস্ক পরিচালনার পরিকল্পনা করছেন। এর মাধ্যমে রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রেও ছাত্রদল একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে তারা আশা করেন।


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আগত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে যে সহমর্মিতার পরিচয় দিয়েছে জবি ছাত্রদল, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থীবান্ধব একটি সেবামূলক পরিবেশ গড়ার প্রয়াসে ছাত্রদলের এই উদ্যোগ আগামীর জন্য এক শক্তিশালী দৃষ্টান্ত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *