
ঢাবি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য এসেছে এক বড় সুখবর। ঢাকার সাত সরকারি কলেজ নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সাত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে নতুন নাম প্রস্তাবনা করা হয়েছে ‘সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ ঢাকা’
সাত কলেজের সমস্যা ও নতুন উদ্যোগ
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে এক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “একটি সরকার বিবেচনাহীনভাবে এই সাতটি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত করেছিল, যা অনেক জটিলতা সৃষ্টি করেছে। তবে এবার এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান বের করতে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। এটি তাৎক্ষণিকভাবে করা সম্ভব নয়। কাঠামোগত পরিকল্পনা, মডেল প্রণয়ন এবং প্রয়োজনীয় অনুমোদনের জন্য কাজ চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের জটিল প্রক্রিয়া
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ উল্লেখ করেন, “একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়। শিক্ষকের নিয়োগ, আইনগত কাঠামো, অর্থায়ন এবং সনদ প্রদানের মতো বিষয়গুলো সময় নিয়ে সম্পন্ন করতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার জন্য তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না। কারণ এটি বহু বছরের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের ওপর প্রভাব ফেলবে। আমাদের দায়িত্ব হলো একটি সুপরিকল্পিত এবং কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা।”
ভর্তি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসছে
ঢাবি এবং সাত কলেজ কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে সাত কলেজের জন্য পৃথক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। ভর্তির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত গ্রহণ এবং আলোচনা করে নতুন নিয়ম চালু করা হবে।
সাম্প্রতিক আন্দোলনের পটভূমি
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো নিয়ে সম্প্রতি উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
কীভাবে সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো?
সন্ধ্যায় পাঁচ দফা দাবি নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবির প্রো-ভিসি ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে অভিযোগ ওঠে, তিনি দুর্ব্যবহার করেছেন। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে অবরোধ করেন।
রাত ১১টার দিকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাবি প্রো-ভিসির বাসভবন ঘেরাও করতে এগিয়ে গেলে ঢাবি শিক্ষার্থীরা মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ে এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।
আরও পড়ুনঃ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ এবং আবেদন প্রক্রিয়া
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ
সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তাঁদের দাবিগুলো প্রো-ভিসি উপেক্ষা করেছেন এবং অশোভন আচরণ করেছেন। ২১ দিন আগে দেওয়া স্মারকলিপি সম্পর্কে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।
ঢাবি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সাত কলেজ আর ঢাবির অধীনে থাকবে না। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাবির অধীনে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
সাত কলেজের জন্য নতুন পথচলা
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সত্যিই একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এটি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।